সাজুর মোড়ের ইতিকথা
সুমিত ঘোষ।
রবিবাসরীয়' ছোটগল্প বিভাগে প্রকাশিত হুমায়ুন কবিরের 'শাঁজুর মোড়' (২১ শে এপ্রিল, ২০১৯) গল্প প্রসঙ্গে মাননীয় পাঠকগনের জ্ঞাতার্থে কিছু সংযোজন করছি।
সাজুর মোড় বা সাজির মোড় হয়তো বা 'শাঁজুর মোড়' ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের (কলকাতা-শিলিগুড়ি জাতীয় সড়ক) উপর অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাসস্টপ । এই বাসস্টপে নেমে ঐতিহাসিক স্থান সুতি অথবা নিমতিতা রাজবাড়ী সরাসরি যাওয়ায় যায়। বিশ্ববরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায় এই নিমতিতা রাজবাড়িতে 'জলসাঘর', 'তিনকন্যা' ও 'সমাপ্তি' ছবির চিত্র গ্রহণ করেন। জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর কন্যার বিবাহ অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলাম এই নিমতিতায় বরযাত্রী হিসেবে এসেছিলেন । এই বিবাহ আসরে কাজী নজরুল যোগীরাজ বরদাচরণ কে প্রত্যক্ষ করেন। তাঁরা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরবর্তীকালে তিনি বরদাচরণের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। নবাব মিরকাসিমের আমলে 'সুতি' র যুদ্ধ সমন্ধে আমরা সকলেই অবগত। এই সুতি বা ঔরঙ্গবাদ বা ধূলিয়ান বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের অর্থনৈতিক মানচিত্রে একটি বিশেষ উল্লেখ যোগ্য স্থান। ঔরঙ্গবাদ-ধুলিয়ান হলো বিড়ি শিল্পের পীঠস্থান।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লেখ্যাগারের সংরক্ষিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের সি. আই. ডি. শাখার বিভিন্ন নথি থেকে এই এলাকার ডাকাত সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানা যায়। এই অঞ্চলটি মুর্শিদাবাদ জেলার সমসেরগঞ্জ থানা এলাকার অন্তর্গত । ১৯২০-৪০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে বিভিন্ন ডাকাত দল ভীষণ ভাবে সক্রিয় ছিল। এই সমস্ত ডাকাত দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ভাসাই পাইকরের ডাকাত দল (যার সদস্য সংখ্যা ছিল ১৯২ জন, এরা ৭২টি ডাকাতি করেছিল ), রহমত পাইকরের ডাকাত দল, ভবানীপুর -তোফা পুরের ডাকাত দল (সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৯ জন )। এই সমস্ত ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন মূলত নিম্ন-হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোক।
হুমায়ুন বাবুর গল্পে উল্লেখিত সাজিরুল বা কার্তিক ডাকাত হয়তো এই রকম কোনো দলের সদস্য ছিলেন। এদের ডাকাতির কর্মকান্ড ধূলিয়ান, ঔরঙ্গবাদ, মালদা জেলার কিয়দংশ, বিহারের বারহারওয়া ও পাকুড় (বর্তমান ঝাড়খন্ড) অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । সাজিরুল বা শাঁজু থানার বড়বাবুর বদন্যতায় বা পরামর্শে ডাকাতি ছেড়ে বাদশাহী রোডের ধারে চা-তেলেভাজার দোকান করে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসেছিলেন। সাজিরুল এবং তার স্ত্রী আসিয়া বিভিন্ন তথ্য থানায় সরবরাহ করতেন। ধীরে ধীরে সমগ্র অঞ্চলটিতে ডাকাতদের উপদ্রব কমে যায়। সাজিরুলের নামানুসারে এই অঞ্চলটি কালক্রমে সাজির মোড় বা সাজুর মোড় নামে পরিচিত হয়।
তথ্যসূত্র: ধুলিয়ান ইতিবৃত্ত, সুমিত ঘোষ। লিস্ট অফ এক্টিভ ডাকইট গ্যাং ইন বেঙ্গল ১৯৩০, সি. আই. ডি. নম্বর ৩০৮, ৩১৩, সি. আই. ডি. রেকর্ডস, গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল।
সুমিত ঘোষ।
রবিবাসরীয়' ছোটগল্প বিভাগে প্রকাশিত হুমায়ুন কবিরের 'শাঁজুর মোড়' (২১ শে এপ্রিল, ২০১৯) গল্প প্রসঙ্গে মাননীয় পাঠকগনের জ্ঞাতার্থে কিছু সংযোজন করছি।
সাজুর মোড় বা সাজির মোড় হয়তো বা 'শাঁজুর মোড়' ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের (কলকাতা-শিলিগুড়ি জাতীয় সড়ক) উপর অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাসস্টপ । এই বাসস্টপে নেমে ঐতিহাসিক স্থান সুতি অথবা নিমতিতা রাজবাড়ী সরাসরি যাওয়ায় যায়। বিশ্ববরেণ্য চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায় এই নিমতিতা রাজবাড়িতে 'জলসাঘর', 'তিনকন্যা' ও 'সমাপ্তি' ছবির চিত্র গ্রহণ করেন। জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর কন্যার বিবাহ অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলাম এই নিমতিতায় বরযাত্রী হিসেবে এসেছিলেন । এই বিবাহ আসরে কাজী নজরুল যোগীরাজ বরদাচরণ কে প্রত্যক্ষ করেন। তাঁরা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরবর্তীকালে তিনি বরদাচরণের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। নবাব মিরকাসিমের আমলে 'সুতি' র যুদ্ধ সমন্ধে আমরা সকলেই অবগত। এই সুতি বা ঔরঙ্গবাদ বা ধূলিয়ান বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের অর্থনৈতিক মানচিত্রে একটি বিশেষ উল্লেখ যোগ্য স্থান। ঔরঙ্গবাদ-ধুলিয়ান হলো বিড়ি শিল্পের পীঠস্থান।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লেখ্যাগারের সংরক্ষিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের সি. আই. ডি. শাখার বিভিন্ন নথি থেকে এই এলাকার ডাকাত সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানা যায়। এই অঞ্চলটি মুর্শিদাবাদ জেলার সমসেরগঞ্জ থানা এলাকার অন্তর্গত । ১৯২০-৪০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলে বিভিন্ন ডাকাত দল ভীষণ ভাবে সক্রিয় ছিল। এই সমস্ত ডাকাত দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ভাসাই পাইকরের ডাকাত দল (যার সদস্য সংখ্যা ছিল ১৯২ জন, এরা ৭২টি ডাকাতি করেছিল ), রহমত পাইকরের ডাকাত দল, ভবানীপুর -তোফা পুরের ডাকাত দল (সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৯ জন )। এই সমস্ত ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন মূলত নিম্ন-হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের লোক।
হুমায়ুন বাবুর গল্পে উল্লেখিত সাজিরুল বা কার্তিক ডাকাত হয়তো এই রকম কোনো দলের সদস্য ছিলেন। এদের ডাকাতির কর্মকান্ড ধূলিয়ান, ঔরঙ্গবাদ, মালদা জেলার কিয়দংশ, বিহারের বারহারওয়া ও পাকুড় (বর্তমান ঝাড়খন্ড) অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । সাজিরুল বা শাঁজু থানার বড়বাবুর বদন্যতায় বা পরামর্শে ডাকাতি ছেড়ে বাদশাহী রোডের ধারে চা-তেলেভাজার দোকান করে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসেছিলেন। সাজিরুল এবং তার স্ত্রী আসিয়া বিভিন্ন তথ্য থানায় সরবরাহ করতেন। ধীরে ধীরে সমগ্র অঞ্চলটিতে ডাকাতদের উপদ্রব কমে যায়। সাজিরুলের নামানুসারে এই অঞ্চলটি কালক্রমে সাজির মোড় বা সাজুর মোড় নামে পরিচিত হয়।
তথ্যসূত্র: ধুলিয়ান ইতিবৃত্ত, সুমিত ঘোষ। লিস্ট অফ এক্টিভ ডাকইট গ্যাং ইন বেঙ্গল ১৯৩০, সি. আই. ডি. নম্বর ৩০৮, ৩১৩, সি. আই. ডি. রেকর্ডস, গভর্নমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল।
সাজুর মোড়ের ইতিকথা
Reviewed by Dhuliyan City
on
21:42
Rating:
No comments: