ইতিহাসের কলঙ্কিত নামটি হল মীরজাফর ? জেনে নেওয়া যাক কি কারনে বলা হয় ?

মুর্শিদাবাদ :- বাংলার ইতিহাসে সব থেকে কলঙ্কিত কোন নাম যদি থেকে থাকে তবে সেই নামটি হল 'মীরজাফর'।দুই বাংলাতেই 'মীর' এবং 'জাফর' দিয়ে বহু নাম পাওয়া গেলেও কোথাও 'মীরজাফর' নামটি পাওয়া যায়না। আজ বাংলা সহ সমগ্র উপমহাদেশেই মীরজাফর নামের সাথে বিশ্বাসঘাতক তমকাটি জুড়ে গেছে।

মীরজাফর কি অদেও বিশ্বাসঘাতক ছিলেন?যদি থেকেও থাকেন তবে তার সাথে আরোও অনেকেই যুক্ত ছিলেন অথচ মীরজাফরকেই কেন অভিযুক্ত করা হল?আমরা মীরজাফর সম্পর্কে কতটুকু সত্য জানি?

প্রচলিত ধারনা অনুযায়ি মীরজাফর একজন ইরাণী ভাগ্যানেষী যুবক যে কিনা কাজের সন্ধানে বাংলায় এসে আলীবর্দীর সৈন্যে নাম লেখায়।এবং আলীবর্দীর সুনজরে পড়ে একদিন সেনাপ্রধান হন।বাস্তব কিন্ত বলে মীরজাফর কোন ভাগ্যানেষী যুবক ছিলেন না তার জন্ম হয়েছিল দিল্লীর লাল কেল্লায়।তার দেহে ছিল মুঘল রক্ত তার বাবা ছিলেন সৈয়দ আহমেদ নাজাফি একজন গুণীজন। মীরজাফরের মা ছিলেন বাদশাহ শাহজাহানের নাতনি।

বাংলায় যখন বর্গি আক্রমন হয় তখন বাংলাকে রক্ষা করতে দিল্লী থেকে মীরজাফরকে নবাবের সহায়তার বাংলায় পাঠানো হয়। কোন ভাবেই মীরজাফর আলীবর্দীর দয়াতে ক্ষমতায় আসেননি।

মীরজাফরের উপর অভিযোগ তিনি নাকি ইংরেজদের বাংলা দখলে সহায়তা করেছিলেন।কথাটি শুনে মনে হয় যেন ইংরেজরা বাংলা বিহার উড়িষ্যার ক্ষমতা দখল করতে এসেছিল আর মীরজাফর যেন ঘুষ নিয়ে সেই কাজে তাদের সাহাজ্য করেছেন।

আদতে ঘটেছিল অন্য ঘটনা মীরজাফর এবং বাকি অমাত্যদের সাহাজ্য করেছিল নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করতে।তার বিনিময়ে তারা নতুন নবাবের কাছে পেয়েছিল বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিপুল সুযোগ সুবিধে এবং প্রচুর অর্থ।

কিন্ত যুদ্ধ শেষে ইংরেজদের মতিগতি বদলে যেতে থাকে। তারা নিজেরায় তখন নবাবের ক্ষমতার উপর লোপুপ দৃষ্টি দেয়।মীরজাফরের যখন মোহভঙ্গ হল তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গেছিল।ইংরেজরা নবাবের সাথে হওয়া সমস্ত চুক্তি অমান্য করে নবাবকে অধিক অর্থের জন্য চাপ দিতে থাকে ফলে নবাব বাধ্যহন তাদের চাপের মুখে ভেঙে পড়তে।শেষ পর্যন্ত নবাব এই দুরাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ওলান্দাজ বনিকদের সাথে যোগাযোগ করেন কিন্ত সে কথাও ইংরেজরা জেনে যায় এবং নবাবকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
ভারতের ইতিহাসে শাসকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করা কোন নতুন ঘটনা নয়।আর ক্ষমতা দখলে বিদেশী শক্তির সাহাজ্য নেওয়াও ১৭ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে খুব অস্বাভাবিক ঘটনা ছিলনা।আলীবর্দী খাঁন ও তার প্রভু সারফারাজকে হত্যাকরে নবাব হয়েছেন কিন্ত তাকে তো বিশ্বাসঘাতক বলা হয়না।তবে মীরজাফরকেই বা কেন বলা হবে? কেনই বা তাকে দেশদ্রোহী বলা হবে? মীরজাফর তো আর ইংরেজ কোম্পানিকে দেশ তুলে দেয়নি।শুধু পুরানো নবাবকে সরাতে তিনি ইংরেজদের সাহাজ্য নিয়েছিলেন মাত্র।আর এই রীতি তখনকার দিনে খুব স্বাভাবিক ছিল।যুদ্ধে জিততে কোম্পানির সৈন্য ভাড়া করত অনেকেই।আর নবাবের সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মীরজাফর একা ছিলেন না ছিল বাংলার বহু গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গও। কিন্তু তাদের মাথায় কিন্ত এই 'গাদ্দার' তমকা লাগেনি অথচ আজোও মীরজাফর ও তার বংশধরদের এই বিড়ম্বনা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে প্রতি মূহুর্তে। যা হয়ত পুরোপুরি সত্য নয়। ইতিহাস থেমে থাকেনা তাই একদিন হয়ত মীরজাফরের মাথা থেকে এই বিশ্বাসঘাতকের তমকাটি ঘুচলেও ঘুচতে পারে।সেই অপেক্ষাতেই আমরা সবাই


সংগ্রহ


মীরজাফর
ইতিহাসের কলঙ্কিত নামটি হল মীরজাফর ? জেনে নেওয়া যাক কি কারনে বলা হয় ? ইতিহাসের কলঙ্কিত  নামটি হল মীরজাফর ? জেনে নেওয়া যাক কি কারনে বলা হয় ?   Reviewed by Dhuliyan City on 00:38 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.