নলিনী বাগচী :- ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দে কাঞ্চনতলায় নলিনী বাগচী জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতা ছিলেন ভুবনমোহন বাগচী । তিনি কর্মসূত্রে নদীয়া জেলার শিকারপুর থেকে কাঞ্চনতলা আসেন । নলিনীর বাল্যকালেই তার পিতার মৃত্যু হয় । তাঁর ডাক নাম ছিল পচা । ছাত্রজীবনের প্রথম ভাগ কাঞ্চনতলা জে ডি জে ইনস্টিটিউশন এবং পরে পাকুড় হাইস্কুলে অতিবাহিত করেন । পাকুড় হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন । তারপরে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তিসহ আই. সি . পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ।
নলিনী বাগচী অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন । তিনি বিহারের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুশীলন সমিতির শাখা গড়ে তোলেন । ১৯১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে পুলিশের খাতায় তিনি ফেরার ছিলেন । ১৯১৭ সালে বালেশ্বরের খণ্ড যুদ্ধের পর সরকারী দমন নীতি প্রচন্ড রূপ ধারণ করলে বাংলার বিপ্লবীদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করতে হয় । নলিনী ও তার সহকর্মীরা পুলিশের শ্যেন দৃষ্টি এড়াবার জন্য আসামের গৌহাটি শহরের একপ্রান্তে গোপন আস্তানা স্থাপন করেন । কিন্তু , একদিন এই গোপন আস্তানার খবর পেয়ে পুলিশ অফিসার ফেয়ারওয়েদার-এর নেতৃত্বে শীতের এক শেষ রাতে তাদের ঘেরাও করা হয় । শুরু হয় দু'পক্ষের তুমুল সংগ্রাম । একদিকে আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত ব্রিটিশ বেতনভুক্ত কর্মচারীর দল , অন্যদিকে মাতৃমন্ত্রে দীক্ষিত কিছু নির্ভীক যুবক , যাদের সম্বল বলতে শুটিকয় রাইফেল ও পিস্তল । এই পরিস্থিতিতে পুলিশের দুর্ভেদ্য বেড়াজাল ভেদ করে নলিনী বাগচী ও প্রবোধ দাশগুপ্ত পলায়নে সক্ষম হন । তারপর নলিনী বাগচী শ্বাপদসঙ্কুল অরন্যপথ পায়ে হেঁটে পার হয়ে অত্যান্ত অসুস্ত অবস্থায় কলকাতা উপস্থিত হন । তখন তার সারা শরীর গুটিবসন্তে ছেয়ে গেছে । জ্বরে বেহুঁশ অবস্তায় গায়ে কম্বল ঢাকা দিয়ে গড়ের মাঠে পড়ে রইলেন । এই সময় বিপ্লবী অতীশচন্দ্র তাকে চিনতে পেরে কোলকাতায় গোপন আস্থানায় সেবা - শুশ্রুষা করে সুস্থ করে তোলেন । এরপরে তিনি বাংলার বিপ্লবী কর্মধারায় গতি আনার জন পূর্ব বাংলা বিপ্লবী সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় চলে যান । ঢাকায় কলতা বাজারে তিনি গোপন আস্থানা গড়ে তোলেন । বিপ্লবী তারিণী মজুমদার তার সঙ্গে সেখানে যোগাদান করেন । সেই সময় ব্রিটিশরা মরীয়া হয়ে উঠেছে বিপ্লবীদের উৎখাত করার জন্য । তাই এই গোপন আস্থানা আর বেশি দিন গোপন রইল না । একদিন পালাবার সমস্ত পথ অবরুদ্ধ করে বিশাল সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী তাদের ঘেরাও করে ফেলে । এই অসম সংগ্রাম -এ বাংলার দুই নির্ভীক বীরের মতো লড়াই চালিয়ে যান । তারিণী মজুমদার পুলিশের গুলিতে নিহত হলেও তিনি এককভাবে দক্ষতার সাথে লড়াই চালিয়ে যান । এক সময় সর্বাঙ্গে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রক্ত আবীরে আপ্লুত হয়ে নলিনী বাগচী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ।
এমত অবস্থায় পুলিশ তার প্রকৃত পরিচয় জানার জন্য একাধারে প্রলোভন ও নির্যাতন চালিয়ে যেতে থাকে । প্রত্যুত্তরে তিনি গর্জে উঠে বলেছিলেন , "Stop Dog , don't Disturb me . Let me die in peace." নলিনী বাগচী চান নি কোনো খ্যাতি, কোনো যশ বা কোনো গৌরবগাথার নায়ক হতে । নিঃশব্দে তার কর্তব্য শেষ করে বাংলার বিপ্লবী কর্মধারাকে উজ্জীবিত করে ১৯১৮ সালের ১৫ জুন ( মতান্তরে ১৬ ই জুন অমৃতলোক যাত্রা করেন ।
অনুলিপি :- ধুলিয়ান ইতিবৃত্ত , সুমিত ঘোষ
নলিনী বাগচী
Reviewed by Dhuliyan City
on
01:15
Rating:
No comments: