বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে ভারত থেকে সাইকেল চালিয়ে রাশিয়ায় হাজির এই ফুটবলপ্রেমী

একজন ফুটবলের অন্ধ ভক্ত হিসেবে আপনার কাছে ফুটবলের সেরা উৎসব হল বিশ্বকাপ ফুটবল। চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হলেও এই মঞ্চে বিশ্বের সেরা সেরা দলের খেলা সকল সাধারণ থেকে পাগল ফুটবলপ্রেমী দর্শকদের মনকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। সাধারণত যেসব দেশ বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশগ্রহণ করে সেই সব দেশ থেকে প্রচুর সমর্থক বিশ্বকাপ ফুটবল দেখার জন্য ছুটে আসে খেলার মাঠে।

তবে অন্য কোন দেশ থেকে আসে না এমন নয়, অনেক ফুটবলপ্রেমী সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পপতি, বা সিনেমা ব্যক্তিত্ব আছেন যারা আসেন মাঠ থেকে খেলার যে ঢেউ তাকে প্রত্যক্ষ করবে বলে। আবার ফুটবলের জ্বরে কাহিল অনেক সমর্থককে খুঁজে পাবেন যারা তাদের ঘর, বাড়ি বা গাড়ির রং তাদের পছন্দের দেশের জাতীয় পতাকার রঙে রাঙিয়ে নেন। ফুটবল এই সব মানুষের কাছে একটা ধর্ম। আর নিজের পছন্দের দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে এরা এমন কিছু নয় যে পারে না।

আমরা ক্রিকেটে ভারতীয় দলের তথা শচীন টেন্ডুলকারের অন্ধ সমর্থক সুধীরের কথা জানি। যেভাবে সে গায়ে জাতীয় পতাকার রং মেখে নিজেকে জীবন্ত জাতীয় পতাকায় রূপান্তরিত করে নেয়, আর তার সাথে থাকে হাতে জাতীয় পতাকা ও শঙ্খ। এমন অনেক ক্রিকেট সমর্থক আছে ভারতজুড়ে। কিন্তু ফুটবলের জন্য বিশেষ কিছু সাধারনত চোখে পড়ে না। যা কিছু চোখে পড়ে তা ঘর, গাড়ি, বা নিজের শরীর রাঙানোতেই সীমাবদ্ধ থাকে।

কিন্তু ক্লিফেন ফ্রান্সিস যেন সমর্থকের সংজ্ঞাটাকেই পাল্টে দিয়েছেন। বা লিখেছেন নতুন করে। বেশি বাড়াবাড়ি পর্যায়ের সমর্থক হলে আমরা নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য যেভাবেই হোক টাকা জোগাড় তা ধার করেই হোক টিকিট সংগ্রহ করে পছন্দের দলের খেলায় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি।

কিন্তু এই ২৮ বছর বয়সী ফুটবল প্রেমী তার ফুটবল প্রেমের জন্য ৪,০০০ কিমি পথ সাইকেলে চালিয়ে অতিক্রম করে রাশিয়ায় পৌঁছে গিয়েছেন। এ যেন মনে হচ্ছে এক কল্প কাহিনীর গল্প। কিন্তু না বাস্তবেই তা করে দেখিয়েছেন কেরালার বাসিন্দা। পেশায় তিনি একজনশিক্ষক ।কেরালার এরণাকুলামে একটি কোচিং সেন্টারে তিনি গণিতের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে তিনি কেরল থেকে যখন এই উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন তখন অনেকেই তার এরকম মনের কথা জানতেন না। কিন্তু তিনি তার এরকম করার ইচ্ছা মনের মধ্যেই রেখেছিলেন। তিনি প্রথমে ভারত থেকে দুবাই যান, সেখানে একটি সাইকেল কেনেন নিজের পছন্দের আর তারপর এই অভিযানে বেরিয়ে পড়েন।

সেখান থেকে তিনি মার্চের ১৩ তারিখ ইরানে পৌঁছান জাহাজে চেপে। এখানে পৌঁছে তিনি ইরানের মানুষের কাছে অনেক ভালোবাসা পান। এমনকি তিনি ইরানের মানুষের সাথে তাদের স্থানীয় খাবার কাবাব ও ইস্তক খেয়ে তার জন্মদিন উদযাপন করেন সেখানে ইরানের মেইমেহ নামক গ্রামের অধিবাসীদের সাথে। তারপর সেখান থেকে সাইকেল চালিয়ে আজারবাইজান পৌঁছে যান, যেখানে তিনি বলিউডের কথা, সালমান ও ঐশ্বর্য রায়ের কথা বলে তাদের মন জয় করে নেন।

এমনকি কেরালার লোক যারা এখন আজারবাইজানে বাস করে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এইভাবে তার যাত্রাপথ মসৃণ ছিল কিন্তু যখন তিনি জর্জিয়া এসে পৌঁছান তখন তাকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তাই বাধ্য হয়ে তাকে আবার আজারবাইজানে ফিরে আসতে হয় এবং আবার রাশিয়া যাওয়ার জন্য নতুন যাত্রাপথ বের করতে হয়।

আর এইভাবেই জুন মাসের ৫ তারিখে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন। তিনি বলেন এইভাবে আসার পথে তার বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে, তাদের খাবার,তাদের সংষ্কৃতি, তাদের পোশাক সবের সাথেই নিজেকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ ঘটেছিল, যা এক কথায় অনবদ্য।

আসলে তার দুই ভালোবাসা এক সাইকেল চালানো এবং দুই ফুটবল প্রেম এই দুয়ের সংমিশ্রনে এই অভিযান সফল হয়েছে বলেই তিনি মনে করেন। আর তাই আগামী ২৬ তারিখ রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ফ্রান্স আর ডেনমার্কের ম্যাচে উপস্থিত থেকে তিনি সকল মানুষকে তার অদম্য ফুটবল প্রেমের নিদর্শন দিতে চান।

আর তার ইচ্চা লিওলেন মেসি তার সাইকেলে যেন অটোগ্রাফ দিয়ে তাকে ধন্য করে দেন। তবে তিনি এখানেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান না, তিনি চান তার সাইকেল নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণ করতে যা তার পরবর্তী পদক্ষেপ হবে যদি তিনি সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারেন এইভাবেই। সত্যিই বিচিত্র ফুটবল, আর বিচিত্র তার সমর্থক।

সৌজন্যে :- dekhenin.net

বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে ভারত থেকে সাইকেল চালিয়ে রাশিয়ায় হাজির এই ফুটবলপ্রেমী বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে ভারত থেকে সাইকেল চালিয়ে রাশিয়ায় হাজির এই ফুটবলপ্রেমী Reviewed by khokan on 11:30 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.