শুভ জন্মদিন রবি ঘোষ , রবি ঘোষের ব্যাপারে কিছু জেনে নেওয়া যাক ?

অভিনেতা
রবি ঘোষ-রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার (জন্মঃ- ২৪ নভেম্বর, ১৯৩১ - মৃত্যুঃ- ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭)

ট্রেন্‌ড বাঘ। পা ছড়িয়ে ঘরের দেওয়াল ঘেঁষে শুয়ে। পাশে বসে ভিজে তোয়ালে বুলোতে হবে তার পিঠে। আর মুখে আদর করার ঢঙে বলে যেতে হবে, ‘উম্মা, উম্মা’। সঙ্গের মহিলা ট্রেনারটি বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ বাঘকে বশে আনার এটাই নাকি দস্তুর। সময়মতো ক্যামেরা চলবে।
প্রায় মিনিট দশেক ‘আদর’ চলার মাঝেই বিপত্তি। উম্মা-র বদলে একবার শুধু ভুলে ‘উমা’ বলে ফেলেছিলেন। তাতেই তেড়ে ফুড়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল বাঘটা। দশ ফুটি তাগড়াই চেহারা। এক থাবায় সাবাড় করে দিতে পারে। করেনি, তবু জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত রবি ঘোষ বলতেন, মাদ্রাজি ওই বাঘের সঙ্গে অভিনয় করাটাই ছিল জীবনের সেরা চ্যালেঞ্জ!
‘হীরক রাজার দেশে’র আউটডোর। ‘পায়ে পড়ি বাঘ মামা’র গানের সঙ্গে সেই বিখ্যাত শট। গুপী আর বাঘা বাঘের ডেরায় ঢুকবে চাবির খোঁজে। তারই ‘টেক’ নেওয়া চলছিল তখনকার মাদ্রাজে।
দূর থেকে ট্রেনার লাঠির ঠক ঠক আওয়াজ করে আবার ‘উম্মা উম্মা’ বলতে তবে সে শান্ত হল। শ্যুটও হল। শেষমেশ এত কনফিডেন্স পেয়ে গিয়েছিলেন যে স্থিরচিত্রীর আবদারে বাঘকে চুমু খাওয়ার ‘পোজ’-ও দিয়েছিলেন রবি ঘোষ।
চ্যালেঞ্জ ‘গুপী গাইন...’-এও কম ছিল না। উখরি-তে শ্যুট। শিমলার থেকেও উঁচুতে। বেজায় ঠান্ডা। পাঁচতলা একটা স্লোপিং দেখিয়ে সত্যজিত্‌ রায় তাঁর বাঘা-গুপীকে বললেন, “ওখান থেকে ঝাঁপ দিতে পারবে না তোমরা?”
চোখের সামনে স্থানীয় লোকজন তর তর করে উঠে যাচ্ছে। ঝপাঝপ ঝাঁপও দিচ্ছে। দেখেশুনে ওঁরা এক কথায় রাজি। কিন্তু চুড়োয় উঠে হাত-পা পেটের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার জোগাড়! কনকনে হাওয়া। তার ওপর ক্যামেরা গণ্ডগোল পাকালো। ফলে অপেক্ষা দীর্ঘ হল। বেশ খানিক পরে ঝাঁপ দেওয়ার তলব।
এর পর শোনা যাক রবি ঘোষের মুখে, “দিলাম ঝাঁপ। সে এক এক্সাইটিং ফিলিং। মনে হল পেঁজা তুলোর ওপর দিয়ে গড়িয়ে এলাম। কিন্তু হাত-পা স্টিফ। মানিকদা বললেন, ‘শিগগির ওদের ভ্যানে তোলো। আর গরম দুধ খাওয়াও।’ সব রেডিই ছিল। গাইড বলল, ‘খবরদার আগুনের কাছে যাবেন না। পা ফেটে যাবে। শুধু পা ঠুকুন।। হাত পায়ের সাড় ফিরতে লাগল পাক্কা চব্বিশ ঘণ্টা।”

“সেপ্টেম্বর মাসের ঘটনা। আমরা জুহুতে ‘পিকু’ ছবির শ্যুটিং করছি। সেটে রয়েছে ইরফান খান, দীপিকা পাড়ুকোন এবং অমিতাভ বচ্চন। সকাল থেকে ক্যামেরাম্যানের সঙ্গে মিটিং করে শটটা প্ল্যান করেছি। টাইম মতো শ্যুটিং শুরু।হঠাৎ‌ শটের মাঝখানে দেখি উনি দীপিকাকে বলছেন, “দীপিকা ডু ইউ নো দিস অ্যাক্টর কলড্ রবি ঘোষ?”
প্রশ্নটা করে উনি ইরফানের দিকেও তাকালেন। দীপিকা, ইরফান কেউই রবি ঘোষকে চিনতেন না। তার পর বলতে শুরু করলেন, ভারতবর্ষে রবি ঘোষের থেকে বড় কমিক টাইমিং আর কোনও অ্যাক্টরের না কোনও দিন হয়েছে, না কোনও দিন হবে। যখন বলছেন তখন আমি, ক্যামেরাম্যান, দীপিকা, ইরফান শুধু হাঁ করে ওঁকে দেখছি আর কথাগুলো শুনছি।
আমি তো জানতামই না উনি এত সূক্ষ্মতার সঙ্গে রবি ঘোষের অভিনয় দেখেছেন। শুনতে শুনতে সে দিন ভাবছিলাম, এত ডিটেলে রবি ঘোষকে অ্যানালাইজ করা বোধহয় শুধু ওঁর পক্ষেই সম্ভব।”  (আনন্দবাজার থেকে)

রবি ঘোষ বিভিন্ন ধরণের চরিত্রে অভিনয় করে বিশেষ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে তিনি সবচেয়ে পরিচিত তার হাস্যরসাত্মক চরিত্র রূপায়নের জন্য। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে তাকে নিয়মিত অভিনয় করতে দেখা গেছে। চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি বাংলা নাট্যমঞ্চ এবং টেলিভিশন তথা ছোট পর্দায় অভিনয় করেছেন। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত গুপী গাইন বাঘা বাইন চলচ্চিত্রে বাঘা চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তিনি সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন।

জন্ম ও কৈশোর
তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার। ১৯৪৯ সালে তিনি সাউথ সুবর্ধন মেইন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ইন্টারপাস করে তিনি আশুতোষ কলেজ-এ ভর্তি হন, গ্রাজ্যুয়েশনের জন্য। ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত তিনি বংশাল কোর্টে কাজ করেন। তিনি অভিনেত্রী অনুভা গুপ্তকে বিয়ে করেন। প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুর দশ বছর পর তিনি ২৪শে নভেম্বর, ১৯৮২ সালে বৈশাখী দেবীকে বিয়ে করেন।

চলচ্চিত্র জীবন
অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় তাঁকে অঙ্গার নাটকে অভিনয় করতে দেখেন। ১৯৫৯ সালে তিনি আহবান চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। তপন সিনহার গল্প হলেও সত্যিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সবার নজরে আসেন। ১৯৬৮ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা সত্যজিৎ রায় নির্মিত গুপী গাইন বাঘা বাইন চরিত্রে তাঁর অভিনয় চলচ্চিত্রজগতে একটি মাইলফলক। একে একে তিনি অভিযান (১৯৬২), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), হীরক রাজার দেশে (১৯৮০), গুপী বাঘা ফিরে এলো (১৯৯১), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩) সহ বেশকিছু উপমহাদেশখ্যাত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি নিধিরাম সর্দার চলচ্চিত্রটি পরিচালনাও করেন। তিনি একজন বিখ্যাত থিয়েটার অভিনেতাও বটে। ১৯৭০ সালে তিনি গুপী গাইন বাঘা বাইন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালেও অংশ নেন। তিনি চলাচল থিয়েটার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

অভিনীত চলচ্চিত্রসমূহ
হাঁসুলি বাঁকের উপকথা
অভিযান
নির্জন সৈকতে
কষ্টিপাথর
পলাতক
ন্যায়দণ্ড
কাপুরুষ ও মহাপুরুষ
মণিহার
গল্প হলেও সত্যি
আশিতে আসিও না
হংসমিথুন
বাঘিনী
বিবাহ বিভ্রাট
তিন ভুবনের পারে
গুপী গাইন বাঘা বাইন
আরোগ্য নিকেতন
অরণ্যের দিনরাত্রি
ধন্যি মেয়ে
কুহেলী
পদি পিসীর বর্মি বাক্স
বসন্ত বিলাপ
মর্জিনা আবদুল্লা
শ্রীমান পৃথ্বীরাজ
যদুবংশ
ফুলেশ্বরী
সাধু যুধিষ্ঠিরের কড়চা
বিকেলে ভোরের ফুল
ঠগিনী
কোরাস
মৌচাক
ছুটির ফাঁদে
সেলাম মেমসাব
রাগ অনুরাগ
সংসার সীমান্তে
মোহনবাগানের মেয়ে
জনঅরণ্য
ভোলা ময়রা
এক যে ছিল দেশ
প্রক্সি
বারবধূ
চারমূর্তি
গণদেবতা
সবুজ দ্বীপের রাজা
নৌকাডুবি
পাকা দেখা
বাঞ্ছারামের বাগান
হীরক রাজার দেশে
সুবর্ণ গোলক
বৈশাখী মেঘ
শহর থেকে দূরে
ঝড়
মালঞ্চ
অমৃতকুম্ভের সন্ধানে
সূর্যতৃষ্ণা
মোহনার দিকে
টগরী
কেনারাম বেচারাম
সম্রাট ও সুন্দরী
অন্তর্জলী যাত্রা
গুপী বাঘা ফিরে এল
আগন্তুক
পদ্মা নদীর মাঝি
প্রজাপতি
আজ কি রবিনহুড
পতঙ্গ

পরিচালিত চলচ্চিত্রসমূহ
নিধি রাম সরদার (১৯৭৬)
সাধু যুধিষ্ঠীরের কড়চা (১৯৭৪)

পুরষ্কার
আনন্দলোক অ্যাওয়ার্ড, কলাকার অ্যাওয়ার্ড
..............

শুভ জন্মদিন রবি ঘোষ , রবি ঘোষের ব্যাপারে কিছু জেনে নেওয়া যাক ? শুভ জন্মদিন রবি ঘোষ , রবি ঘোষের ব্যাপারে কিছু জেনে নেওয়া যাক ? Reviewed by Dhuliyan City on 22:26 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.