সে কি মায়া ? নাকি মরণ ছায়া ?

এক আশ্চর্য ব্যাপার | একজন মানুষের মধ্যে দুটি সত্বার উপস্থিতি | পৃথিবীরে এমন অনেক ঘটনা বার বার ঘটতে দেখা গেছে | যেখানে একজন মানুষ হয়তো আছেন কলকাতাতে | অথচ তার একটি প্রতিচ্ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে মুম্বাইতে | ব্যাপারটা সত্যি তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে তাই না ? পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যার কোন ব্যাখ্যা আমরা দিতে পারি না | '' হ্যানকাজম অফ দ্য লিভিং '' নামক গ্রন্থে এজাতীয় অনেক আপাত
অলৌকিক ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে | ১৯০৮ সাল | তখন সমস্ত ইংল্যান্ড জুড়ে চলেছে রাজনৈতিক ঘুর্ণাবর্ত | বিরোধী পক্ষ চাইছে সরকারকে ভোটযুদ্ধে পরাস্ত করতে | হাউস অফ লর্ডসের অধিবেশন চলছে | একজন সদস্য স্যার কার্ল রাউস, তিনি কিছুতেই সংসদে উপস্থিত থাকতে পারলেন না | কিন্তু যখন ভোটাভুটি নেওয়া হলো তখন দেখা গেল তিনি হাউসে উপস্থিত হয়েছেন | সকলে অবাক হয়ে গেল এইভেবে যে একজন নিদারুন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি কি করে সংসদে উপস্থিত হলেন - আসলে তিনি যখন রোগশয্যায় শায়িত ছিলেন তখন একইভাবে হাউস অফ লর্ডসে উপস্থিত হয়েছিলেন | একই ধরনের এক ঘটনা ঘটেছিল কানাডাতেও  | এসেম্বলি অফ ব্রিটিশ কলোম্বিয়া একটি অধিবেশনের আয়োজন করেছিলেন | ১৮৬৫ সালের ১৩ ই জানুয়ারী | এটি হয়েছিল ভিক্টোরিয়া শহরে | সেখানে চার্লসফুট নামের এক ভদ্রলোক প্রচন্ড অসুস্থতার মধ্যে দ্বৈত সত্তার সাহায্যে সংসদে উপস্থিত ছিলেন | সেখানে তার একটি
ছবিও নেওয়া হয়েছিল | অথচ একই সময়ে তিনি হাসপাতালে শুয়ে সম্ভাব্য মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিলেন | একজন মানুষ কি সত্যি সত্যি দুই জায়গাতে উপস্থিত হতে পারে ? বিজ্ঞান এব্যাপারে কোন আলোকপাত করতে সমর্থ হয়নি | হের বাঙ্কারের বইতে এ ধরনের একাধিক ঘটনার উল্লেখ আছে | তিনি এক মিউনিক নিবাসী ইঞ্জিনিয়ারের ঘটনা উল্লেখ করেছেন | এই ভদ্রলোক একটি কারখানাতে কাজ করতেন | একবার কারখানা থেকে বাড়িতে ফিরে এসেছেন | হঠাৎ কি মনে হওয়াতে তিনি আবার কারখানাতে ছুটে গেলেন | দেখলেন একটি লোক তার কেবিনে বসে কাজ করছে |
এতে তিনি অত্যন্ত বিরক্ত হলেন | লোকটিকে ভর্তসনা করতে যাবেন তখনই তার হঠাৎ মনে হলো যে তারই মতো দেখতে লোকটি সেখানে কাজ করছে | এই ঘটনাতে ভদ্রলোক অত্যন্ত অবাক হয়ে গিয়েছিলেন |
যারা প্যারামনোবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন তারা মনে করেন যে মানুষের মধ্যে দ্বৈত সত্তার উপস্থিতি আছে | একটি হলো তার শারীরিক সত্তা | যাকে আমরা চোখের সামনে পরিদৃশ্যমান দেখি | আর একটি হলো তার অনুবীক্ষনিক সত্তা যেটি আমাদের তাৎক্ষনিক দৃষ্টি সীমার মধ্যে আসেনা | মাঝে মধ্যে এই অদৃশ্য সত্তা জীবন্ত হয়ে ওঠে | এ প্রসঙ্গে শ্রীমতি উইলিয়ামের অভিজ্ঞতার কথাও বলা উচিত | তিনি ছিলেন
ইংল্যান্ডের নিবাসী | তিনি লিখেছেন - একবার দুরারোগ্য ব্যাধিতে আমি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম | ডাক্তাররা যখন আমার দেহে অস্ত্রোপচার করছিলেন তখন আমি অচৈতন্য অবস্থায় ছিলাম | কিন্তু আমি বেশ
পরিস্কার বুঝতে পারছিলাম যে আমার দেহের থেকে একটি সুক্ষ আত্না বেরিয়ে এসেছে | সেই আত্নার চোখের সামনে পুরো শল্য চিকিৎসার ব্যাপারটি সম্পন্ন হলো | ইংল্যান্ডের আর এক ভদ্রলোক এ এইচ বেয়ারের
ঘটনাও কম কৌতুহলোদ্দীপক নয় | তিনি তার স্মৃতি কথায় লিখেছেন - ১৮৮১ সালের নভেম্বর মাস | আমি আমার এক বান্ধবীর শোবার ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিলাম | তিনি থাকতেন ২২ নম্বর খগরা রোডে | জায়গাটা ছিল কেনসিংটনে | যদিও আমার শারিরীক সত্তা সেখানে উপস্থিত হতে পারেনি | তবুও একটি সুক্ষ দেহে আমি সেখানে প্রবেশ করেছিলাম | এমনকি পরে আমি আমার বান্ধবীকে বলেছিলাম সেদিন রাতে সে কি পোশাক পরে শুয়েছিল | আমার কথা শুনে বান্ধবী একেবারে অবাক হয়ে গিয়েছিল | এমনকি সে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে বেশ কিছুক্ষণ সে তার শোবার ঘরের মধ্যে একজন অশরীরী উপস্থিতিকে অনুভব করেছিল | ব্রিটিশ সোসাইটি ফর সায়কিক্যাল রিসার্চের প্রধান ড: এডমন্ড গারমির কাছে এ ধরনের অনেকগুলি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে | তার অনুরোধে ঐ ভদ্রলোক আবার তার বান্ধবীর সাথে এভাবে মিলিত হয়েছিলেন | সেবার তার বান্ধবী যে শুধুমাত্র তার উপস্থিতি অনুভব করেছিলেন তা নয় - বান্ধবীর চুলের ওপর হাতের স্পর্শ দিয়েছিলেন তিনি | যারা প্যারামনোবিজ্ঞানের বাসিন্দা তারা এইসব ঘটনাকে অবিশ্বাস করেন না কিন্তু যারা এসব কথা মানেন না তারা মনে করেন, এ হলো মানুষের আজগুবি মনের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয় |

সে কি মায়া ? নাকি মরণ ছায়া ? সে কি মায়া ? নাকি মরণ ছায়া ? Reviewed by khokan on 06:47 Rating: 5
Powered by Blogger.