কেমন_আছে_সত্যজিতের_জলসাঘর

নিমতিতা_রাজ_বাড়ি :- কোথাও ভেঙে পড়েছে ছাদ, কোথাও বা সিঁড়ির ওপর আগাছার রাজত্ব। পলেস্তারা খসে গেছে দেওয়াল থেকে। তবু, আছে। ইতিহাস কখনও ফুরিয়ে যায় না বলেই আছে। নিমতিতা রাজবাড়ি। আজও সামনে গিয়ে দাঁড়ালে মাথা নিচু হয়ে আসে বিশালত্বের কাছে। হোক জীর্ণ, মহাকাল সাক্ষী – ছিল, একদিন ছিল...
                   সেই কবে গৌরসুন্দর চৌধুরী ও দ্বারকানাথ চৌধুরী দুই ভাই মিলে তৈরি করেন এই রাজবাড়ি। শুরু হয় জমিদারি। আলো, উৎসবের কমতি ছিল না কোনও। দোলের সময় পনেরো দিন ধরে চলত যাত্রাপালা। দুর্গাপুজোয় রাজবাড়ির জমক তো ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা মুর্শিদাবাদেই। আর নাট্যচর্চায় এই রাজবাড়ি ছিল অগ্রণী। দ্বারকানাথের ছেলে জ্ঞানেন্দ্রনারায়ণের বিয়ের সময় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কলকাতার স্টার থিয়েটার গ্রুপকে। ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদেরও স্মৃতি ধরে রেখেছে নিমতিতা। তিনি তাঁর নাট্যগোষ্ঠী নিয়ে এখানে এলে, রাজবাড়ির পক্ষ থেকে স্থাপিত হয় নিমতিতা রঙ্গমঞ্চ। এই মঞ্চে অভিনয় করে গিয়েছেন নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ীও।
সেসব আজ শুধুই স্মৃতি। গঙ্গা খেয়েছে সব। ১৯৪৪-এর বন্যার সময়, ভেঙে পড়ে রঙ্গমঞ্চটি। ভাঙনের সেই শুরু। দশক শতক পেরিয়ে, আজ হারাতে বসেছে রাজবাড়িই।
                              ‘তবু কিছু মায়া রহিয়া গেল’। সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘জলসাঘর’(১৯৫৭) ছবি শ্যুট করেছিলেন এই নিমতিতা রাজবাড়িতেই। শুধু ‘জলসাঘর’ই নয়, ‘দেবী’(১৯৫৯) ও ‘সমাপ্তি’(১৯৬০)-ও। সত্যজিতের এই তিনটি সিনেমার ফ্রেমে ফ্রেমে বেঁচে রয়েছে নিমতিতা রাজবাড়ির জৌলুস। উঁহু, বর্তমানের সঙ্গে তুলনা করতে নেই। বিষণ্ণতা বাড়বে তাহলে। বরং ঘটে যাওয়া বিবর্তনের জন্য সময়ের দিকে আঙুল তুলি।
সময়ের সঙ্গে হারিয়েছে সবই। জমিদারের বর্তমান বংশধরেরা থাকেন কলকাতায়। দুর্গাপুজোর সময় আসেন নিমতিতায়। হ্যাঁ, সব হারিয়েও দুর্গাপূজা এখনও টিকে আছে রাজবাড়িতে। ঠাকুরদালানের অবস্থা কিছুটা ভালো, অন্যান্য অংশের তুলনায়। অতীতের সঙ্গে বর্তমানের যোগসূত্র এটুকুই। তবে, কতদিন জারি থাকবে এই ঐতিহ্য, বলা যায় না কিছুই।
         যেমন ভঙ্গুর এই রাজবাড়ির ভবিষ্যৎও বলতে পারে না কেউ। ভাঙতে ভাঙতে মাটিতে মিশে না-যাওয়া পর্যন্ত, আমরা, ইতিহাস নিয়ে বেঁচে থাকা কয়েকজন, ভয়ার্ত তাকিয়ে থাকব শুধু। সাধ্য কী, নিয়মে বদল ঘটাই!
                     অথচ, ভাগীরথীর বয়ে চলেছে পাশ দিয়ে। মাঝেমধ্যে জোয়ারের সময় জল উঁকি দিয়ে যায় রাজবাড়ির উঠোনে। চারপাশের দৃশ্যও মনোরম। চাইলে সংস্কারের মাধ্যমে একটি ভ্রমণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যেতেই পারে রাজবাড়িটিকে। ইতিমধ্যেই হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা চলছে পুরোদমে। স্বীকৃতি এলে পর্যটকদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠবে এই ঐতিহ্যের রাজবাড়ি। আমরা প্রত্যয়ী।

#Plz_Share

কেমন_আছে_সত্যজিতের_জলসাঘর কেমন_আছে_সত্যজিতের_জলসাঘর Reviewed by Dhuliyan City on 04:44 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.