দেবাশীষ মণ্ডল, মেদিনীপুর ঃ- পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় থানার অন্তর্গত সরিষা কুনারপুর অঞ্চল হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী রুম্পা প্রামাণিক আজ রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছে নিজকর্মে। সাদামাটা চেহারার গ্রাম্য মেয়েটির রূপের জৌলুস হয়তো তেমন চোখ ধাঁধানো নয়। কিন্তু তার মনের ইচ্ছাশক্তি আর বুকের বল যেকোনো সিনেমার নায়ককে হার মানাবে। নায়ক বললাম এই কারণেই যে, আজকে আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজে বিশেষত গ্রাম্য পরিবেশে যেখানে মেয়েদের একগাদা বারণ মেনে আজও চলতে হয়, সেখানে রুম্পা একটু আলাদা তো বটেই।
ঘটনাটি গতকালের হলেও এমন একটি মেয়ের কথা লিখতে পারিনি ওর কোনো ছবি ছিলোনা বলে। তাই আজ লিখলাম।
গতকাল যখন স্যার ক্লাসে পড়া বোঝানোয় ব্যস্ত, তখনই বর্ষণমূখর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে কোনো এক ফাঁকে রুম্পার নজর বাইরে চলে যায়। পলকের দৃষ্টিতে হঠাৎ স্কুল বিল্ডিংয়ের ওপারে প্রায় একশো মিটার দুরে ভরা পুকুরে কিছু একটা ছোট্ট জিনিস দৃষ্টি আকর্ষণ করে রুম্পার। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করে যায় মূহুর্তে। স্যারের অনুমতির অপেক্ষা না করেই দে দৌড়। বর্ষার এটেল মাটির কাদায় শাড়ি পরে হিমা দাসের মতো ক্ষিপ্র গতিতে পুরো স্কুল বাউন্ডারি পেরিয়ে জীবনের তোয়াক্কা না করে ভরা দিঘিতে ঝাঁপ। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাঁতরে গিয়ে তুলে নিয়ে আসে একটি আড়াই বছরের শিশুর শান্ত শরীর। ক্ষণিকের বিহ্বলতা কাটিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েও একটা শেষ চেষ্টা করে সকলে। হঠাৎ শিশুটির একটি অঙ্গ নড়ে উঠতেই সবাই আশায় বুক বেঁধে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা করতে কিছুটা কাজ হতেই বেলদা গ্রামীণ হাসপাতাল। শেষ পর্যন্ত শিশুটি এখন বিপদমুক্ত হয়ে চিকিৎসাধীন।
একটি ফুটফুটে শিশুর প্রাণ বাঁচিয়ে রুম্পা এখন এলাকায় সেলিব্রেটি। শুভেচ্ছা আর ভালোবাসার জোয়ারে ভেসেও নির্লিপ্ত রুম্পা। কাজে সফল হতে পেরে খুব খুশি ও। খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষাকর্মী সহ পড়ুয়ারাও। বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক মেদিনীপুর বাসী সন্তোষ ভকত প্রতিবেদককে বলেন রুম্পার সাহসিকতা ও সহমর্মীতায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহল গর্বিত। বিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুষ্ঠানে তাকে সম্বর্ধিত করা হবে।
রুম্পার সাহসিকতা ও সহমর্মিতা আমাদেরও মুগ্ধ করেছে। সাবাস রুম্পা! জীবনে অনেক বড়ো হও।(সংগৃহীত)
Reviewed by Dhuliyan City
on
10:27
Rating:
No comments: