ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠছে ফরাক্কায় গঙ্গায়তার দৌলতেই ৮০ টাকা কিলো দরে বিকোচ্ছে খোকা ইলিশ





ফারাক্কা ২৪ অক্টোবর : উৎসবের মরশুমে বাড়তি পাওনা। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠছে ফরাক্কায় গঙ্গায়। আর তার দৌলতেই ৮০ টাকা কিলো দরে দেদার বিকোচ্ছে খোকা ইলিশ । একটু বড় হলেই সাইজ মত তা মিলছে দেড়শো থেকে আড়াই শোতে।
বাংলা দেশের পদ্মা বেয়ে ইলিশের ঝাঁক গঙ্গায় চলে আসায় ফরাক্কা বাঁধের উজানে ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গত দশ দিন ধরে বান ডেকেছে ইলিশের। জলের দামে অঢেল ইলিশ আমদানির খবর পেয়ে সকাল থেকে মহাজনদের ভিড় বাড়ছে ফরাক্কার গঙ্গা পাড়ে। জেলেদের কাছ থেকে সরাসরি ইলিশ কিনে নিচ্ছেন তারা নদীর পাড় থেকেই। সস্তায় ইলিশ পেতে সকাল, বিকেল নদীর পাড়ে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরাও ।
রাজ্য মতস্য দফতরের ব্যাখ্যা, পদ্মা নদী নিমতিতার আগে মিশেছে গঙ্গায়। সেই পদ্মার বাঁকা পথেই বাংলাদেশ থেকে ইলিশের ঝাঁক ঢুকেছে ফরাক্কায়। ফরাক্কা বাঁধ হওয়ার পর গত চার দশকে ইলিশ প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছিল ফরাক্কায় গঙ্গা থেকে। মাঝে মধ্যে কখনও ইলিশ জালে পড়লেও তার দাম ছিল আকাশ ছোঁয়া। গত পাঁচদিন থেকে মৎস্যজীবীদের জালে হঠাৎ করে মাত্রা ছাড়া ইলিশ উঠতে শুরু করেছে। আর তাতেই দীপাবলির আগে কপাল ফিরেছে স্থানীয় মৎস্যজীবীদেরও। তড়িঘড়ি ধুলিয়ান, হাজারপুর, অর্জুনপুর, মহেশপুর লাগোয়া গঙ্গায় ইলিশের খোঁজে ডিঙ্গি নৌকো নিয়ে নেমে পড়েছেন শতাধিক মতস্যজীবী ।
নিউ ফরাক্কার ব্লক অফিসের পাশেই পাইকারি মাছের বাজার। উতসবের মরশুমে ইলিশের অঢেল আমদানিতে খুশি মাছের ব্যবসায়ীরাও। মাছ ব্যবসায়ী ভোলা সেখ বলছেন, “ সাধারণ সময়ে ফরাক্কার বাজারে ইলিশের জোগান আসে বড় জোর ৫/৬ মণ মত । গত পাঁচ দিন থেকে ইলিশ আসছে ১৫০ থেকে ১৮০ মণ করে। একদিন তা ২০০ মণও ছাড়িয়ে গেছে।”
তিনি জানান,এই সব ইলিশের প্রায় ৬০ শতাংশই ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রামের মধ্যে। বাকিটা ৪০০ গ্রামের নিচে। এই সব খোকা ইলিশ বিকোচ্ছে ৮০ টাকা কিলোয়। বড় গুলো মিলছে সাইজ বুঝে ২৫০ টাকার মধ্যে। গত বছরও অবশ্য একই ভাবে পুজোর সময় দিন দশেকের জন্য গঙ্গায় ইলিশ মিলেছিল দৈনিক তিনশো মনেরও বেশি। মুর্শিদাবাদের মতস্য দফতরের সহ অধিকর্তা জয়ন্ত কুমার প্রধান জানান, এই সময় সমুদ্র থেকে ইলিশ পদ্মায় মিস্টি জলে ডিম ছাড়তে আসে। তাদের গতিপথে ঝাঁক বেঁধে থাকা পদ্মার ইলিশ কোনোভাবে গঙ্গা দিয়ে এসে ফরাক্কা বাঁধের বাধায় থমকে গেছে ইলিশের ঝাঁক। তাতেই ফরাক্কায় গঙ্গায় এত ইলিশ মিলছে। তবে এটা সাময়িক ।” সাময়িক হলেও পুজোর মরশুমে হঠাত করে এত পরিমাণে ইলিশ চলে আসায় মতস্য প্রিয় বাঙালির কাছে তা যে একটা বড় পাওনা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।ফরাক্কার হাজারপুরে নদীর পাড়ে এখন মেলা বসছে সকাল, সন্ধ্যে। মতস্যজীবী বুধন হালদার বলছেন , “ গত ৫দিনে ১৩৮ কিলো ইলিশ ধরা পড়েছে আমার জালে। বেশির ভাগেরই সাইজ ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম। তবে এত বেশি ইলিশ মেলায় দাম নেই সেভাবে। ”
বেশির ভাগ মতস্যজীবী টিনের ডোঙা নিয়ে ফাঁস জাল ফেলতে ফেলতে যাচ্ছেন নদী বেয়ে। কয়েক ঘন্টা অপেক্ষার পর সেই জাল গোটাতে গোটাতে ফিরছেন। তাতেই আটকা পড়ছে ইলিশ। ফাঁস জালে ইলিশ ধরা বেআইনি। খোকা ইলিশ ধরাও নিষিদ্ধ। জানেন মতস্যজীবীরাও । কিন্তু তাদের সাফাই, এতো সবই বাংলাদেশের ইলিশ । ফরাক্কায় মেলেই না বড় একটা । পুজোর মরশুম তাই যা পাচ্ছি সেটাই লাভ। মতস্য দফতরের কর্তার হিসেবে, প্রাপ্ত বয়স্ক একটি ইলিশ ২০ লক্ষ মত ডিম পাড়ে। তার ১০ শতাংশ বাঁচলেও এক বছরেই তার সংখ্যা দাঁড়াবে লক্ষাধিক। সেই কারণেই ডিম ছাড়ার সময়ে বাংলাদেশে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ খোকা ইলিশ ধরাও। নিষেধাজ্ঞা আছে এ বঙ্গেও । ফরাক্কায় অবশ্য এ সব মানার বালাই নেই এখন।

 তথ্য – কমল মজুমদার

                                 
ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠছে ফরাক্কায় গঙ্গায়তার দৌলতেই ৮০ টাকা কিলো দরে বিকোচ্ছে খোকা ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠছে ফরাক্কায় গঙ্গায়তার দৌলতেই ৮০ টাকা কিলো দরে বিকোচ্ছে খোকা ইলিশ Reviewed by khokan on 20:01 Rating: 5
Powered by Blogger.