#ঋজু
তখন বয়স কত আর হবে? এই বড়জোর ছয় কি সাত। যতদূর মনে পড়ে ক্লাস ওয়ান তখন।
পাশের ফ্ল্যাটের সৃজার সাথে খেলতে যেতাম মাঝে মধ্যে। প্রায়দিনই আমরা বৌ সাজা বৌ সাজা খেলতাম।সৃজার মায়ের পুরানো কাপড় গুলো পরে। কাপড় পরে, হাতে চুড়ি পরে, মাথায় ঘোমটা দিয়ে সৃজা আর আমি বৌ সাজতাম।একদিন সৃজার মা বাড়ি নেই এই সুযোগে সৃজা তার মায়ের ড্রেসিং টেবিল থেকে একটা সিঁদুর ভর্তি কৌটো নিয়ে এসে অল্প একটু সিঁদুর নিয়ে চুলের মাঝে লাগিয়ে নিল। আমার ছোট্ট বেলার সেই বান্ধবি আমাকেও বলল, "এই তুই ও একটু লাগিয়ে নে না। দেখ কি সুন্দর বৌ বৌ লাগবে তোকেও।" হাতটা একবার বাড়িয়েও শেষ পর্যন্ত আমি সিঁদুরটা আর নিইনি। তবে মনের মধ্যে ইচ্ছেটা জেগেই রইল। সিঁদূর পরে বৌ সাজার।সিঁদুর পরলেই তো বৌ বৌ লাগে নাহলে লাগে নাকি?
সুপ্ত বাসনায় পরিপূর্ণতার প্রলেপ লাগানোর উপায় শেষ পর্যন্ত পেলাম যখন আমি ক্লাস ইলেভেন। আমার মায়ের একটা গোপন যায়গা ছিল যেখানে মা অনেক কিছুই লুকিয়ে রাখতেন। বাবার থেকে বাঁচিয়ে টাকা পয়সা তো রাখতেনই, আরো যাসব রাখতেন তা কল্পনার বাইরে। ওই যায়গায় হাত দেওয়া বা দেখার অধিকার বাবারও ছিল না। সেই বয়সটাই এমন ছিল যে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি চুম্বকের মত আকর্ষন কাজ করত। একদিন মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে মায়েরই সেই গোপন যায়গায় পুরানো জিনিসপত্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে আমি এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করেছিলাম যা বিগত হাজার বছরেও আমার বাড়িতে থাকা তো দুরের কথা কেউ কোনদিন ওসবের কথা ভাবেও নি। তাও কি করে যেন মায়ের পুরানো সাজগোজের জিনিসের ভিড়ে উঁকি মারল সেটা আমার বোধগম্য হল না। একটা সিঁদুর ভর্তি সিঁদুর কৌটো। হ্যাঁ ভর্তিই ছিল।
অনেক দিনের পুরানো সুপ্ত একটা আশা জেগে উঠল। মা বাড়িতে নেই। বাবা তো কখন আসে কখন যায় তার খবর কেউ জানে না। এই সুযোগ। সুপ্ত ইচ্ছায় পরিণতির প্রলেপ দিতে বেশ গুছিয়ে একটা শাড়ি পরলাম। হাতে চুড়ি, মাথায় ঘোমটা দিয়ে বেশ সেই ছোট্ট বেলার মত বৌ সাজলাম। সিঁদুরের কৌটো টা খুলে সৃজার দেখানো পদ্ধতি মত অল্প একটু সিঁদুর নিয়ে শুন্য সিঁথি রাঙিয়ে দিলাম। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই আমার ছোট্ট বেলার বান্ধবি সৃজার বলা কথাটা মনে পড়ে গেল। "এই তুই ও একটু লাগিয়ে নে না। দেখ কি সুন্দর বৌ বৌ লাগবে তোকেও।" সত্যি তো বেশ বৌ বৌ লাগছে। অনেকবার করে আয়নায় মুখ দেখছি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ঠিক তখনই মা পেছন থেকে এসে এক ধাক্কায় আমার হাতের সিঁদুর কৌটো টা ফেলে দিয়ে সেদিন যে ভাবে মেরেছিল কোন মা তার ১৭ বছরের মেয়ে কে ওভাবে কোনদিন মারে নি। আমাকে মেরে মা প্রচন্ড কেঁদেছিল সেইদিন। আমি বুঝতে পেরেছিলাম মুসলমান হয়ে সিঁথি সিঁদুরে রাঙিয়ে আমি খুব বড় ভুল করে ফেলেছি। তার জন্য আমি অননুতপ্তও ছিলাম। সেদিন মার খেয়ে আমার নিজের জন্য যতটা না কষ্ট হয়েছিল তার থেকে বেশি এই ভাবনাটাই কষ্ট দিয়েছিল যে, মুসলমান পরিবারের বৌ হয়ে মার কাছে সিঁদুরের কৌটো কোথায় থেকে এল?আর এই কৌটোটা সবের আড়াল থেকে লুকিয়ে মা এতদিন রেখেছেই বা কেন? তবেকি মা প্রায় দু' যুগ ধরে সবের চোখের আড়াল থেকে লুকিয়ে নিজের স্বপ্ন কেই বাঁচিয়ে রেখেছিল.... ঠিক আমারই মত? না অন্য কিছু? মায়ের কি কোন হিন্দু প্রেমিক ছিল? কাউকে কথা দেওয়া ছিল? কি জানি। জানতে চাইও না।
-সমাপ্ত-
 
        Reviewed by Dhuliyan City
        on 
        
05:03
 
        Rating: 
 
No comments: