একজন_স্বাধীনতা_সংগ্রামীর_জীবন_সংগ্রামের_ইতিবৃত্ত ।


   মিহিজাম:-  অনেকদিন ধরেই উনাকে নিয়ে কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করছিলাম। উনি আমার পরম শ্রদ্ধেয়, আমার আদর্শ।
আজ লিখতে বসে ভাবছি উনার সুবিশাল কর্মজীবনের কতটুকুই বা জানি। তবে যেটুকু জানি সেটা লেখার চেষ্টায় ব্রতী হলাম।
   উনার আদি বাড়ি বর্দ্ধমান জেলার দাঁইহাটে। প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী ছিলেন। দাঁইহাট, পাটুলি ও কাটোয়ায় তিনটি সাইকেলের দোকান। তখনকার দিনের সমস্ত খবরের কাগজের এজেন্সি ছিল। সঙ্গে একটা নামি বিস্কুট কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটারশিপ। দাঁইহাটের ভাউসিঙ এলাকায় পায় জমিদার বাড়ির মত বিশাল বাড়ি। বুঝতেই পারছেন, প্রাচুর্যের কোন অভাব ছিলনা।
    উনিই  আমার দাদমশায় শ্রদ্ধেয় ইন্দ্রচন্দ্র মুখার্জ্জী। দাঁইহাটে উনি ইন্দু মুখুজ্জে নামেই সুপরিচিত ছিলেন। সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গেও ছিল উনার নিবিড় যোগাযোগ। যার  প্রভাবে বাল্যকালে আমিও প্রভাবিত হয়েছি।
    যাক, উনার যে পরিচিতির জন্য আমরা গর্বিত, সেটা হল উনি এবং উনার সহধর্মীনি শ্রদ্ধেয়া জ্ঞানপ্রভাদেবী দুজনেই ছিলেন একনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী। স্বাধীনতা আন্দোলনের সেই উতাল তরঙ্গে দুঝনেই ঝাঁপিয়ে পরেছিলেন। নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর সঙ্গে উনার ফটোও আমি দেখেছি। উনার বাড়িতে নেতাজীর পদধুলিও পরেছিল বলে শুনেছি।
    এই আন্দোলনে খুচরো খুচরো হাজতবাসের পর একবার উনার দেড় বছরের কারাবাস হয়। আমার দিদাও এক বছরের মেয়েকে(আমার ছোট মাসী) কোলে নিয়ে ছয় মাসের কারাবাস ভোগ করেন।
     কারাবাসের সময় ব্যাবসার ভার এক নিকট আত্মীয়ের হাতে দিয়ে যান। জেল থেকে বেড়িয়ে এসে দেখেন সমস্ত ব্যাবসাই লাটে উঠিয়ে সেই আত্মীয় উধাও। উনি তখন প্রায় পথের ভিখাড়ী।
    কিন্তু উনার ছিল অদম্য জেদ আর হার না মানা মনোভাব। ঘরোয়াভাবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার একটা চর্চা উনার ছিলই। সেটাকেই পুঁজি করে ঘুরে দাঁড়াবার বাসনায় উনি চলে মিহিজামে। সেখানে প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শ্রদ্ধেয় পরেশ ব্যানার্জ্জীর কাছে থেকে হোমিও চিকিৎসায় নিজেকে সম্বৃদ্ধ করে মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ানে এসে শুন্য থেকে শুরু করেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই।
    শ্রদ্ধেয় পরেশবাবুর অনুপ্রেরণায় পথচলা শুরু করে "মিহিজাম দাতব্য চিকিৎসালয়"। দুস্থ, দরিদ্র রুগিদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতেন, ওষুধও দিতেন। উনাকে ধুলিয়ানবাসী "মিহিজাম ডাক্তার" বলেই এক ডাকে চিনত। 
    পরবর্তীতে যখন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পেনসন প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়, উনি কিন্তু পেনসনের জন্য আবেদন করেননি। উনি বলতেন, "কোন কিছু  পাওয়ার জন্য তো লড়াই করিনি। তাই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আর কোন কিছুর প্রত্যাশা করিনা"।
   আমি আমার চার বছর বয়স থেকে উনার কোলে পিঠে বড় হয়েছি। উনার আদর্শের যদি ছিটেফোঁটাও গ্রহণ করতে পারি নিজেকে ধণ্য মনে করব।
    উনার প্রতিষ্ঠিত সেই চিকিৎসালয় পরবর্তীতে আমার ছোটমামা শ্রদ্ধেয় সুজিত মুখার্জ্জীর উপর ন্যস্ত হয়। আজ উনার আশীর্বাদধণ্য সেই প্রতিষ্ঠান "মিহিজাম ফার্মেসী" নামে উনার পৌত্র অভিজিত মুখার্জ্জী (শঙ্কু ) র তত্বাবধানে ধুলিয়ানের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান।
  উনাদের প্রতি আমার অন্তরের শ্রদ্ধা জানিয়ে এই লেখা শেষ করছি। মনে হচ্ছে যেটুকু লিখলাম তার চেয়ে অনেক বেশি কথাই অনুল্লেখিত রয়ে গেল।
Written by - Gurudas Chatterjee

একজন_স্বাধীনতা_সংগ্রামীর_জীবন_সংগ্রামের_ইতিবৃত্ত । একজন_স্বাধীনতা_সংগ্রামীর_জীবন_সংগ্রামের_ইতিবৃত্ত । Reviewed by Dhuliyan City on 07:58 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.