বিরোধীদের চুপ করানোর সব অস্ত্রই রয়েছে মোদির তূণে


বিরোধীদের চুপ করানোর সব অস্ত্রই রয়েছে মোদির তূণে

 November 30, 2016  0 Comment #BlackMoney#Coldplay#NarendraModi#Pakistan

দেশজুড়ে এ কথা যেন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে, যে নরেন্দ্র মোদি একজন আধুনিক প্রধানমন্ত্রী৷ তাঁর নেতৃত্বে দেশ এগোচ্ছে, যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত স্বার্থে করছেন৷ কিন্তু সত্যি কি তাই, উত্তর খুঁজলেন দীপেন্দু পাল৷


আড়াই বছর কেটে গেল প্রায়৷ যাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন মোদির রাজনীতির মূলমন্ত্রই হল, “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ৷” দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে যে গতিতে তিনি একের পর এক কড়া ওষুধ গেলাচ্ছেন, বিরোধীরা দিকভ্রান্ত, কোনটা ছেড়ে কোনটার সমালোচনা করবেন!

এহেন প্রধানমন্ত্রী কালো টাকার রমরমা রুখতে দেশজুড়ে ৫০০ ও ১০০০ টাকার পুরনো নোট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন৷ যে দৃঢ় পদক্ষেপ করার সাহস তিনি দেখিয়েছেন, তাতে প্রথমটায় বিরোধীরা দিশাহারা হয়ে পড়েছিল৷ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না সমর্থন, কোনটা করবেন বুঝেই উঠতে পারছিলেন না৷ সেই সুযোগে জাতীয় স্তরে বাঘা বাঘা রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীকে টপকে গেলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তবে তিনিও যেটা পারেননি, সেটা করতে সক্ষম হয়েছেন মোদি৷ একজন দুঁদে রাজনৈতিক নেতার মতো তিনি দেশের শিক্ষিত যুব সম্প্রদায়কে তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে নিয়ে আসতে পেরেছেন৷ তার জন্য প্রয়োজনে ব্রিটিশ ব্যান্ড কোল্ডপ্লে-র কনসার্টেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য পেশ করেন তিনি৷ জনপ্রিয় ওই ব্যান্ডের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদের দূরদূরান্তেও কোনও যোগাযোগ নেই৷ এ কথা এখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে, যে মোদি একজন আধুনিক প্রশাসক৷ ঠিক যেমনটা হয়েছিল ইন্দিরা গান্ধীর ক্ষেত্রে, যখন তিনি দেশে কম্পিউটার আনার পক্ষে জোরাল সওয়াল করেছিলেন৷

সেই মোদিই আবার দশেরায় “জয় শ্রী রাম” বলে জয়ধ্বনি দিতে পারেন৷ আবার, প্রায় ৮০ হাজারের জমায়েতের সামনে বব ডিলানকেও উদ্ধৃত করতে পারেন৷ বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে গুঁজে দেন স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্য, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি৷ মোদির কাজ খানিকটা সহজ করে দিলেন ব্যান্ডটির লিড সিঙ্গার ক্রিস মার্টিন ও সুরকার এ আর রহমান৷ ‘বন্দে মাতরম’-এর সঙ্গে, তালে তালে দিল্লিতে উড়ল জাতীয় পতাকা৷ কোথাও একটা একথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল, মোদি যা করেছেন, দেশের জন্যই করেছেন৷ বাকিরা ব্যক্তি স্বার্থের কথা ভেবে বিরোধিতা করছেন৷ সবমিলিয়ে ওই অনুষ্ঠান বার্তা দিল, গো-রক্ষা, অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ থেকে বেরিয়ে এসে ট্রেন্ডি, সেকুলার, লিবারাল, ক্যাশলেস আর্বান যুবক-যুবতীদের জন্য নয়া ভারত তৈরি হচ্ছে৷ এই যুবক-যুবতীদের মধ্যে অধিকাংশই অনলাইনে সিনেমার টিকিট কাটেন ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে৷ সীতারাম ইয়েচুরি কী বলল, তাতে তাঁদের কিছুই যায় আসে না৷ মমতা রাস্তায় নেমে যানজট বাড়ালে, তাঁরা রাগই করেন৷

ভুল করে বসলেন রাহুল গান্ধীও৷ যে কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে ‘ইউথ আইকন’ বলে ভাবতেন যুবকরা, সেই গান্ধীই টুইট করে বসলেন, দেশে গরিব মানুষরা মারা যাচ্ছে, এই অবস্থায় কেন কোল্ডপ্লে-র কনসার্ট হচ্ছে? যেখানে ঘটনা হল, তাঁর দলের মধ্যেই প্রচুর কোল্ডপ্লে-র ভক্ত রয়েছেন৷ একে তো নোট বাতিল হওয়ায় দেশের মধ্যবিত্ত মানুষ ও ছোট সৎ ব্যবসায়ীরা মহাখুশি৷ তার উপর এখন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এটা ধরেই নিয়েছেন, দেশের স্বার্থে তেতো ওষুধ গিলতে হতেই পারে৷ রাজনাথ সিং তো বলেই ফেললেন, “যাঁদের টাকা আছে ও যাঁদের টাকা নেই, মাঝের এই বিপুল ফাঁকটা ভরাট করতে হবে৷” যার ফলে যে মানুষটি অফিসে কোনওদিন ঘুষ নেননি, তিনি এখন বাড়িতে এসে গিন্নিকে বলছেন, “ঠিক হয়েছে, ওই চক্কোত্তি যে ঘুষের টাকায় অমন তিনতলা বাড়ি হাঁকিয়েছে, সে কথা কী কেউ জানত না নাকি এতদিন! এখন বোঝ ঠ্যালা, বিছানার নিচে সাজানো ১০০০ টাকার সব নোট এখন রদ্দি কাগজ৷”

মোদি এই জাতীয়তাবাদী তকমাটা গায়ে সেঁটে নিয়েছেন সেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে৷ সাধে কী আর সিনেমায় জন আব্রাহামকে বলতে শোনা যায়, “সময় পাল্টেছে, আমরা এখন নিয়ম মানি না, প্রয়োজনে শত্রুর ঘরে ঢুকে মারব৷” নিয়মের তোয়াক্কা না করে, নাটকীয় কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপক্ষকে একেবারে ধরাশায়ী করে ফেলা, এই ইমেজটাই মোদিকে আগামী নির্বাচনগুলিতে বিরোধীদের চেয়ে বহু ক্রোশ এগিয়ে রাখবে৷

বিরোধীদের চুপ করানোর সব অস্ত্রই রয়েছে মোদির তূণে বিরোধীদের চুপ করানোর সব অস্ত্রই রয়েছে মোদির তূণে Reviewed by khokan on 10:38 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.